জরায়ুমুখ ক্যান্সার ৮০% ভালো হয়

 



যৌনাঙ্গের সব রোগের মধ্যে সবচেয়ে জটিল জরায়ু মুখ ক্যান্সার। তবে এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রতিরোধযোগ্য। সমাজে যদি সচেতনতা আসে তাহলে ক্যান্সার বহুলাংশে কমানো সম্ভব।

জরায়ুমুখ ক্যান্সার বিশ্বের দ্বিতীয় প্রধান ক্যান্সার। প্রতি বছর লাখ ৭০ হাজার নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এরমধ্যে ৫০% নারীই মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশেও এই ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। ১২ হাজার ৫শ নারী। ঘন্টায় জন করে মারা যান। তবে নারী দেহের যৌনাঙ্গের এই ক্যান্সারই সর্বাধিক সফলভাবে প্রতিরোধ যোগ্য। সচেতনতাই পারে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে। সাধারণত ২০ বছরের নিচে রোগ হয় না। আক্রান্তরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী হয়ে থাকেন।

জরায়ুমুখ ক্যান্সার ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে একটু বেশি সময় নেয়। স্বাভাবিক কোষগুলো ক্যান্সার কোষে রূপান্তরিত হতে ১০-২০ বছর সময় নেয়। ক্যান্সার কোষে রূপান্তর হলে রোগটি দ্রুত বাড়তে থাকে। কখনও পিন্ডের মতো আকার ধারণ করে কখনও ঘা এর মতো হয়। তখন বিভিন্ন লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।

থেকে বাঁচার জন্য প্রথমেই আচরণগত প্রতিরোধের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন: বাল্য বিবাহ রোধ, ধূমপান করা, পানের সঙ্গে জর্দা, সাদা পাতা, দাঁতের গোড়ায় গুল ইত্যাদি কারণে এই ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ে বিধায় তা প্রতিরোধ করতে হবে। সুষম খাবার গ্রহণ, ফলমূল শাকসব্জি খাওয়া, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত, সুশৃঙ্খল জীবন যাপন সামাজিক অনুশাসন মান্য করা এই রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালণ করে।

দ্বিতীয়ত জরায়ুমুখে ক্যান্সার প্রতিরোধক টিকা নেওয়া যায়। বাজারে `গার্ডাসিল` ` সারভারিক্স` নামে ভ্যাক্সিন পাওয়া যায়। সাধারণত ১০ বছরের পর থেকেই এই টিকা নেওয়া যাবে। প্রথম ডোজের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং প্রথম ডোজের ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ টিকা নিতে হয়। আমেরিকার FDA অনুযায়ী -২৫ বছর বয়সে টিকা কার্যকর হয়। গর্ভাবস্থায় টিকা প্রদানের অনুমোদন নেই। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর টিকা আর কোন কাজে আসে না।

তৃতীয় সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা হলো যথাযথ স্ক্রীনিং। ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী সহজে জরায়ুমুখ দেখতে এবং পরীক্ষা করতে পারেন। রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে জরায়ু মুখে অনেকদিন ধরে একটি ক্যান্সার পূর্ব অবস্থা বুঝা যায় কিংবা ভবিষ্যতে ক্যান্সারের আশংকা আছে কিনা তা নির্ণয় করা যায়। Pap smear এবং via হলো এরকমই স্ক্রীনিং টেস্ট।

VIA আমাদের দেশে সব সরকারি বড় হাসপাতালে বিনামূল্যে সহজেই করা যায়। ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত নারীদের বছরে একবার এই পরীক্ষা করা উচিত। পরপর দুই বার নেগেটিভ হলে বা বছর পরপর দুইবার পরীক্ষা করাবেন।

জরায়ু মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগের ধাপ অনুযায়ী হয়ে থাকে। যদি কারো ক্যান্সার পূর্ব অবস্থা (CIN) থাকে তাহলে তা নিয়মিত স্ক্রীনিং করে জরায়ুমুখে সামান্য সেক দিয়ে অথবা LEEP এর মাধ্যমে সারানো যায়। বয়স্ক মহিলা হলে জরায়ু ফেলে দেওয়া যায়। যদি ক্যান্সার হয়ে যায় তাহলে ক্লিনিকাল স্টেজিং করা হয়। রোগীকে অজ্ঞান করে স্টেজিং করা হয়। এবং বায়োপসি নেওয়া হয়।

ক্যান্সার কতোটা ছড়িয়েছে তা দেখা হয় স্টেজিং এর মাধ্যমে। স্টেজ- এবং স্টেজ- কিছু ক্ষেত্রে অপারেশন করা হয়। এই অপারেশনটি খুবই জটিল এবং নির্দিষ্ট হাসপাতালে হয়ে থাকে। স্টেজগুলোতে রেডিও থেরাপি অথবা কেমোথেরাপী দেওয়া যেতে পারে।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট হাসপাতের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগ থেকে সর্বশেষ প্রকাশ করা প্রতিবেদন মতে, ২০০৫ সালে মোট হাজার ২৭৫ জন নারী রোগীর মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ৫৬১ জন। তথ্য আছে, PAP SMEAR করে জরায়ুমুখ ক্যান্সার ৮০% এবং এর ফলে মৃত্যু ৭০% কমানো সম্ভব।

নিরাপদ যৌন মিলন, জরায়ুমুখ টিকা, VIA, PAP SMEAR এর মাধ্যমে যেমন এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় তেমনি তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় হলে সফল চিকিৎসার মাধ্যমে বহুলাংশে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সবার মধ্যে ব্যাপারে জনসচেতনতা খুবই দরকার।

লেখক পরিচিতি: ডা. উম্মুল খায়ের মাহমুদা একজন প্রসূতি, স্ত্রী বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন। তিনি শিশু মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট শমরিতা হাসপাতালে কাজ করেন।


 


1 টি মন্তব্য:
Write Comments

Hey, we've just launched a new custom color Blogger template. You'll like it - https://t.co/quGl87I2PZ
Join Our Newsletter